ঢাকা , সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ , ১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আর কত বিদ্যুতকর্মীর প্রাণ গেলে টনক নড়বে!

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১০-০৪-২০২৫ ০৭:১৫:১৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১০-০৪-২০২৫ ০৭:১৫:১৪ অপরাহ্ন
আর কত বিদ্যুতকর্মীর প্রাণ গেলে টনক নড়বে! ​হাসপাতালে কামরান হোসেনের মরদেহ। ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীর মগবাজারে বিদ্যুৎতায়িত হয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) এক লাইনম্যানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে দুইটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ, অন্যটি ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যুৎ বিভাগের তিন সদস্যের কমিটিকে আগামী ৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল ২০২৫) দুপুরে বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব ফারজানা খানম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে (স্মারক নং-২৭.০০.০০০০.০৮৮.২৭.০০১.২৪.১৫৩) এ তথ্য জানানো হয়। 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেড-এর এনওসিএস মগবাজার, ডিপিডিসি দপ্তরে সিএসএস এর মাধ্যমে কামরান হোসেন, লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৯ এপ্রিল বিকাল ৩.৩০ ঘটিকার সময় ১৫/১৫ পশ্চিম রামপুরা ঠিকানায় নতুন সার্ভিস তার সংযোগ প্রদানকালে এলটি লাইনে দুর্ঘটনাবশত তিনি বিদ্যুতায়িত হন এবং জ্ঞান হারিয়ে মই-এ ঝুলে থাকেন। জানা যায় যে, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কর্তৃক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্ণিত বিষয়টি তদন্তের জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ৩ অধিশাখার যুগ্মসচিব মো. শরীফুল ইসলামকে আহবায়ক এবং ডিপিডিসির শামপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীহানিফ উদ্দিন ও ঢাকার বাবিউবো নির্বাহী প্রকৌশলী, মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) তানভীর আহমেদকে সদস্য করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে কামরান হোসেনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তপূর্বক কারণ নির্ধারণসহ দায়ীদের চিহ্নিতকরণ এবং গৃহীতব্য ব্যবস্থার সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ৩ অধিশাখার যুগ্মসচিব মো. শরীফুল ইসলাম মুঠোফোনে বাংলা স্কুপকে বলেন, তদন্ত কমিটি গঠনের কাগজ আজ আমি হাতে পেয়েছি। দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়ে দিব।

এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগ তদন্ত কমিটি গঠনের পর বৃহস্পতিবার ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ পৃথক আরেকটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহবায়ক হলেন সিভিল ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান এবং সদস্য হিসেবে রয়েছেন ম্যানেজরা (এইচআর) মো. আশরাফ উদ্দিন ও ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যানিং সাউথের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিঃদাঃ) মো. রবিউল ইসলাম। কমিটিকে এক কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে অফিস আদেশ থেকে জানা যায়।

জানা গেছে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বিদ্যুৎকর্মীর মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। এর আগে রাজধানীর মুগদা, সিদ্ধিরগঞ্জ, আদাবর, মানিকনগরে এমন দুর্ঘটনায় বিদ্যুৎকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি পরীবাগ ডিভিশনের আওতাধীন শাহবাগের বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কাজ করতে গিয়ে একইভাবে প্রাণ হারান এক বিদ্যুৎকর্মী। এভাবে একের পর এক কর্মীর মৃত্যু ঘটছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এ জাতীয় দুর্ঘটনার পর শুধু তদন্ত কমিটি গঠন ছাড়া আর কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এমনকি, নিহতদের পরিবারের সদস্যরা তাদের ক্ষতিপূরণও ঠিকভাবে পায়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

তবে, এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম মানিকনগরের ঘটনা। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা  মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ওই দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত বিদ্যুৎকর্মীর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয় এবং নিহতের পরিবারের ভরনপোষণের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। 

বুধবারের (৯ এপ্রিল ২০২৫) ঘটনায় হাসপাতালে মৃত কামরানের পরিবার অভিযোগ করেছেন, কামরান তামিম ইন্টারন্যাশনালের হয়ে কাজ করছিলেন। বিকেলে মগবাজারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলমের নির্দেশে তিনি মগবাজার এলাকায় কাজ করতে যান। লাইন বন্ধ না রেখে কাজ করানোর কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। 

নিহত কামরানের পরিবার ও সহকর্মীদের অভিযোগ, ওই নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বহীনতায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যুৎলাইন সচল থাকা অবস্থায় কামরানকে কাজ করতে বলা হয়েছিল।

ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, এক সিঙ্গেল ফেইজ বিদ্যুৎগ্রাহকের বাসায় থ্রি ফেইজ মিটার পরিবর্তন করতে গিয়েছিল কামরান। বিদ্যুতের প্রধান সঞ্চালন লাইন বন্ধ না করেই খুঁটিতে উঠে সঞ্চালন লাইনে গ্রাহকের তার পরিবর্তন করতে গিয়েই তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে রামপুরার বেটার লাইফ হসপিটালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ডিভিশনের প্রকৌশলীরা জানান, কামরানের মরদেহ পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুরে দাফনের জন্য মরদেহ নিয়ে যায় কামরানের স্বজনেরা।

এ ঘটনা সম্পর্কে তামিম ইন্টারন্যাশনালের এক কর্মী জানান, বাৎসরিক ঠিকাদার হিসেবে তারা মূলত ডিভিশনগুলোতে লোকবল সরবরাহ করেন। এরপর তারা কোথায় কাজ করবেন; কী কাজ করবেন তা নির্ধারণ করেন ডিভিশনের প্রকৌশলীরা। ওই কর্মী আরো অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বন্ধ না চালু রয়েছে, তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ফিডার ইনচার্জের (প্রকৌশলী)। মাঠপর্যায়ে বিদ্যুৎকর্মীরা কীভাবে কাজ করছেন, তাও প্রকৌশলীরা দেখেন না। কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটলেই সব দায় এসে পড়ে বাৎসরিক ঠিকাদারের বিদ্যুৎকর্মীদের উপর।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মগবাজারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মাহে আলম মুঠোফোনে বলেন, আমি এখন ব্যস্ত, এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারব না।

এদিকে, বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নূর আহমদ বাংলা স্কুপকে জানান, ঘটনায় কারো দায়িত্বহীনতা থাকলে সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই দুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে। কেউ দায়ী থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ